শনিবার ● ৫ ডিসেম্বর ২০২০
প্রচ্ছদ » জাতীয় » আত্মীয়’র সাথে দেখা হলোনা স্বজনের : ঠাকুরগাঁওয়ে এবছর ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তমেলা হলোনা
আত্মীয়’র সাথে দেখা হলোনা স্বজনের : ঠাকুরগাঁওয়ে এবছর ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তমেলা হলোনা
দেশায়ন ডেস্ক : ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুর উপজেলায় পাথরকালী পূজা উপলক্ষে প্রতিবছর ডিসেম্বরের প্রথম শুক্রবার ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে অনুষ্ঠিত হয় দুই-বাংলার মিলনমেলা। নাড়ীর টানে স্বপ্ল সময়ের জন্য হলেও স্বজনদের সঙ্গে দেখা করতে ছুটে আসে বাংলাদেশ ও ভারতের হাজার হাজার লোকজন। সীমান্তের কাছে বাংলাদেশের নাগর নদী পার হয়ে কাঁটাতারের কাছে পৌঁছে দেখা হয় প্রিয় স্বজনদের সাথে ।
কিন্তু করোনার কারণে এবছর পাথরকালী পূজা স্বল্প পরিসরে অনুষ্ঠিত হলেও আয়োজন নেই এবারের সীমান্ত মিলনমেলার। গতবারের মিলন উৎসবের চিত্র আর এবারের দৃশ্যপটে অনেক তফাৎ।
এলাকবাসী জানায়, ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীবাহিনী (বিএসএফ) করোনায় সাবধানতার জন্য সীমান্তের কাঁটা তারের কাছে লোকজনের ভিড় জমাতে দেয়নি। তাই এবার অনুষ্ঠিত হলোনা এমন দিনব্যাপী ব্যতিক্রমী প্রাণের সীমান্ত মেলা।
ভারত ও বাংলাদেশের সীমারেখা এঁকে কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে আলাদা করা হয়েছে। তবে সেই কাঁটাতারের বেড়া, পৃথক করতে পারেনি দুই দেশের মানুষের পারিবারিক এবং বন্ধুত্বের সম্পর্ককে। তাইতো ধর্মীয় এবং অন্য যে কোন উৎসবে সুযোগ পেলেই তারা ছুটে যান সীমান্তে।
কয়েক মিনিট বা ঘন্টা ধরে সময় কাটান স্বজনদের সান্নিধ্যে। বিনিময় করেন মনের জমানো না বলা কথা। উপহার সামগ্রীও বিনিময় করেন।
তাই প্রতিবছর এখানে ভারত-বাংলাদেশের দুই সীমান্তের হাজার হাজার মানুষের সমাগম হয়। এবার করোনার কারনে সেখানে জনমানবশূন্য মিলনমেলার দৃশ্য।
আজ শুক্রবার (৪ ডিসেম্বর) জেলার হরিপুরের ভাতুরিয়া ইউনিয়নের টেংরিয়া গোবিন্দপুর জামরকালিতে (পাথরকালি) শুধুমাত্র ৪০/৫০ জনের মত স্থানীয় এলাকাবাসী পূজার জন্য সমবেত হয়েছেন মাত্র।
উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, সীমান্তের ঐতিহ্যাবাহী বাংলাদেশ-ভারত মিলনমেলা। ভাতুরিয়া-তাজিগাঁও সীমান্তের নীভৃত গ্রাম টেংরিয়া গোবিন্দপুর কুলিক নদীর পাড়ে পাথরকালী পূজা উপলক্ষে ইংরেজি মাস ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহের শুক্রবার দিনে মেলা শুরু হয়। ভারত-বাংলাদেশ সমন্বয়ে কাঁটা তারের কাছে একদিন ব্যাপী বসে মিলনমেলা।
জেলার পীরগঞ্জের বাকলী রাণী (৫৭), চন্দ চাঁদ রায় (৬০) অমল (৪৭) এমন অনেকে বলেন, সকাল থেকে আমার আত্মীয়-স্বজনদের সাথে দেখা করার জন্য অপেক্ষায় রয়েছি দুপুর গড়িয়ে বেলা শেষের দিকে তারপরেও দেখা করতে পারছিনা। করোনা ভাইরাসের কারণে সব বন্ধ। আত্মীয়রা উপরে অপেক্ষায় রয়েছে তারাও কাঁটা তারের কাছে ভিড়তে পারছেনা। তাই পূজা শেষ করে বাড়ি ফিরে যাব। তবে আগামী বছর দেখা করতে আসবো।
গতবছর ২০১৯সালে ডিসেম্বর মাসের ১৩ তারিখ শুক্রবারে পূজার পাশাপাশি এই সীমান্ত মিলনমেলা বসেছিল।
গতবছর শুক্রবার হরিপুরের নাগর নদের পাড়ে কোচল এবং চাপাসাড় সীমান্তে ৬৮ পিলারের পাশ ঘেঁষে সীমান্তের দু’ধারে সকাল ১১টা-বিকাল ৪টা পযর্ন্ত চলে দুই বাংলার মানুষের মিলনমেলা। কেউ নিজ মেয়ে সন্তানের জন্য কাপড় নিয়ে এসেছিলেন। কেউ অনেক শত মাইল দূর থেকে বাবার জন্য খাবার নিয়ে দেখা করতে এসেছিলেন।
পাশের জেলা দিনাজপুরের জ্যাতিষ চন্দ্র রায় বলেন, ভারতের উত্তর দিনাজপুরে আমার বোনজামাই থাকেন। তাদের সঙ্গে দেখা করতে এসেছি। গত বছর মানুষের ভীড়ে দেখা ৪ ঘন্টা অপেক্ষার পরও তাদের দেখা পাইনি। এবছর তো এসে দেখি করোনার জন্য কোন মানুষই নদী পার হবার অনুমোতি নেই।
পূজা কমিটির সভাপতি কালিকান্ত রায় বলেন, করোনা ভাইরাসের কারণে মিলনমেলা হয়নি শুধু পূজা পালন করা হয়েছে। গোবিন্দপুর ও চাপাসার সীমান্ত রক্ষী বাহিনীরা জানান, করোনা ভাইরাসের কারণে মিলনমেলা বন্ধ করে দিয়েছে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ। কাঁটা তারের কাছে বাংলাদেশীরা যেনো না যায় সে জন্য আমাদের অনুরোধ করেছে তারা।