শিরোনাম:
ঠাকুরগাঁও, বৃহস্পতিবার, ১৭ অক্টোবর ২০২৪, ৩১ আশ্বিন ১৪৩১

Deshayan
রবিবার ● ৩১ মে ২০২০
প্রচ্ছদ » আন্তর্জাতিক » করোনা : ঠাকুরগাঁও ও বাংলাদেশ পটভুমি
প্রচ্ছদ » আন্তর্জাতিক » করোনা : ঠাকুরগাঁও ও বাংলাদেশ পটভুমি
৯২৬ বার পঠিত
রবিবার ● ৩১ মে ২০২০
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

করোনা : ঠাকুরগাঁও ও বাংলাদেশ পটভুমি

--- দেশায়ন ডেস্ক : পরিচয়: ড. মো. আনোয়ার খসরু পারভেজ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের অধ্যাপক। প্রেষণে পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্বে রয়েছেন। সংক্রামক অনুজীব নিয়ে গবেষণা তাঁর মূল ক্ষেত্র। কোভিড-১৯ যা করোনা নামে সমধিক পরিচিত, এ অনুজীব নিয়ে তিনি বর্তমানে গবেষণা করছেন। তিনি ঠাকুরগাঁওয়ের সন্তান। তিনি সরকারি ভাবে ঠাকুরগাঁওয়ে ল্যাব স্থাপনের সম্ভবনা জরিপ করেন।

এই ভাইরাসের উত্থান, বিশ্বব্যাপী এর বিস্তার এবং মানুষ থেকে মানুষে এ রোগ থেকে রক্ষা পাওয়ার কৌশল, সংকটজনিত প্রসঙ্গে কথা বলেছেন।

এনিয়ে সম্প্রতি গত ২৮ মে ঠাকুরগাঁওয়ে আলাপ হয়েছে দেশায়ন সম্পাদক গোলাম সারোয়ার সম্রাট এর সঙ্গে।
সাক্ষাতকারটি প্রকাশ করা হলো:

১. দেশায়ন সম্পাদক গোলাম সারোয়ার সম্রাট:

ড. আনোয়ার খসরু পারভেজ আপনাকে ধন্যবাদ। ঠাকুরগাঁওয়ে করোনার বিস্তার সম্পর্কে জানতে চাই ?

ড. আনোয়ার খসরু পারভেজ:
ঠাকুরগাঁও সর্ম্পকে বলতে গেলে বলা যায় এখানে করোনা সংক্রমণ মোটামোটি কম হয়েছে। প্রথমে নারায়ণগঞ্জ থেকে কিছু লোকজন আসে সেটাই হলো আমাদের কমিউনিটি ট্রান্সমিশনের উৎস।
এখানে সামাজিক বিস্তৃতি কম হয়েছে কারণ এখানকার জনপ্রতিনিধি, প্রশাসন, স্বাস্থ্য বিভাগ এবং গণমাধ্যম কর্মীরা সবাই মিলে এটাকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করেছেন। এবং সেটাকে পয়েন্ট আউট করে পদক্ষেপ নিয়েছেন। আমরা যদি ঢাকায় আক্রান্তর সংখ্যা চল্লিশ হাজারের বেশী দেখি। তাহলে বাংলাদেশের অন্যান্য জেলা থেকে তুলনামূলক বিচারে ঠাকুরগাঁওয়ের আক্রান্তর সংখ্যা কম।

২. গোলাম সারোয়ার সম্রাট: ঠাকুরগাঁওয়ে তো কোভিড-১৯ সংক্রমণ ঘটেছে। তা কম হোক আর বেশী, আমরা কি ভাবে জীবন যাপন করতে পারি ?

ড. আনোয়ার খসরু পারভেজ:
দেশের মধ্যে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ এখন হটস্পট হিসেবে বলা হচ্ছে। দেশের ৬৪ জেলার মধ্যে সংক্রমণ ঠাকুরগাঁওয়ে কম। আমাদের রংপুর ডিভিশনের মধ্যে, কিন্তু তার মানে এই নয় যে আক্রান্তর সংখ্যা কম , আমরা বসে থাকবো। আমাদের দায়িত্ব আরো বেড়ে গেছে। এই জেলার একটি ইতিবাচক দিক যে এটা বাংলাদেশের অন্যান্য জেলার মত ঘনবসতির নয়। আমার গবেষণার জন্য এখানকার উপজেলাগুলোর বেশ কয়েকটি গ্রামে গিয়েছি। মনে হলো মানুষজন বেশ সচেতন। সুতরাং এটা ভালো লক্ষণ।
কোভিড-১৯ করোনা কে ঠেকানো বলতে আমরা বুঝি স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলা। গত দুই মাস ধরে যে সরকারি স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলার কথা বলা হচ্ছে গণমাধ্যমে বা অন্য মাধ্যমে তা মানতে হবে। এই যে বিধি জীবনের অংশ হলো, তা আগামী ছয় মাস বা এক বছর মেনে চলতে হবে। মাস –বছর ধরে এই স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলার মধ্য দিয়ে আমরা করোনা সংক্রমণের যে গ্রাফ সেটাকে কমিয়ে আনা সম্ভব হবে। হয়তো একেবারে ঠেকানো সম্ভব না কিন্তু এর ট্রান্সমিশন চেইন কমিয়ে আনা সম্ভব। এটা ব্রেক করা সম্ভব। বার বার হাত ধোয়া, সবসময় মুখে মাস্ক পড়ে থাকা, সামাজিক দুরুত্ব মেনে চলা, কথাবলার সময় সাবধানে কথাবলাসহ অন্যান্য বিধি নিষেধ চর্চা করা খুব জরুরি। সাথে সাথে আরেকটি কথা বলব বাজে অভ্যাস যেটা সকল বাঙালিরই আছে যেমন থুথু দিয়ে টাকা গোনা, কলম কামড়ানো, যত্রতত্র হাঁচি-কাশি দেই। এই যে বাজে অভ্যাসগুলো সব সময় জীবনে ছিল। এগুলো জীবন থেকে বাদ দিতে হবে। কারণ হাঁচি-কাশি যেহেতু এয়ার ড্রপলেটস এর মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে, এ নিয়ে সতর্ক থাকতে হবে। এ জন্য আমাদের সার্বক্ষণিক মুখে মাস্ক এবং বার বার সাবান দিয়ে হাত ধোয়াসহ বাধ্যগত ভাবে সকল প্রকার স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলতে হবে। যেহেতু এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত কর্যকরী কোন ওষুধ কিংবা ভ্যাক্সিন আবিস্কৃত হয়, নিজেদের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোই এখন একমাত্র হাতিয়ার। নিয়ম্-মাফিক ঘুমাতে হবে । প্রত্যহ ১৫-৩০ মিনিট ব্যায়াম করতে হবে। ভিটামিন-ডি এর জন্য প্রতিদিন রোদ পোহাতে হবে। ভিটামিন-সি সমৃদ্ধ ফল-মূল, শাক-সবজি বেশি বেশি খেতে হবে। প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে। প্রতিদিন লেবু দিয়ে গরম পানি খাওয়া যেতে পারে। স্মরণ রাখতে হবে, সৃস্টিকর্তার পাশাপাশি রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতাই এখন আমাদের একমাত্র ভরসা।

৩ . গোলাম সারোয়ার সম্রাট: ঠাকুরগাঁও কৃষিপ্রধান এলাকা। করোনাকালে আমরা কেমন রয়েছি ড. পারভেজ আপনি কি দেখলেন ?

ড. আনোয়ার খসরু পারভেজ:
এখন পর্যন্ত করোনা রোগী শনাক্ত কম সংখ্যক প্রায় ৮৪ জন। আমরা জানি ৭ মার্চে ঢাকায় করোনা সংক্রমণ প্রথম ঘটে। সেই হিসেবে ৮০ দিনের বেশী হচ্ছে। আমার মনে হয় আমরা ভালো অবস্থানে রয়েছি। এর অ্যাডভান্টেজ আমাদের নিতে হবে। এই এরঅকার জীবনযাত্রা এবং অর্থনীতির কথা ভাবেন তাহলে বলা যায় এখানে বড় ধরণের ক্রাইসিস নাই। হ্যাঁ কৃষিপ্রধান অর্থনীতির কারণে এই জেলাবাসী ভালো একটা অবস্থানে রয়েছে। কৃষি ভিক্তিক অর্থনীতির কারণে এখানে আমি দেখেছি এখানে ধান, মিষ্টি কুমড়াসহ বিভিন্ন সবজির ফলন ভালো হয়েছে। এগুলো সঠিকভাবে বাজারজাত করতে হবে। মানুষের খাদ্যাভাবের সমস্যা ঠাকুরগাঁওয়ে হবেনা। তবে এর সমাধানে আমাদের সকল পেশার মানুষকে এক সঙ্গে কাজ করতে হবে। এই সুযোগ আমাদের কাজে লাগাতে হবে।

৪ . গোলাম সারোয়ার সম্রাট: ভাইরাসটির নাম নভেল করোনা। এই রোগীদের লক্ষণ, তার গতি-প্রকৃতি কি কেমন হতে পারে। এ বিষয়ে বলবেন কি ?

ড. আনোয়ার খসরু পারভেজ:
আমি আবারো বলছি যে, এটা একটা নতুন ভাইরাস তাই এর নাম নভেল । এর রূপ পরিবর্তনের ক্ষমতা অনেক বেশী। এটা অনেক বার রূপ বদলেছে। এর প্রথম জিনোম নিয়ে আমাদের শ্রদ্ধেয় অধ্যাপক সমীর সাহা অগ্রণী। সমীর সাহা এবং তাঁর মেয়ে সেঁজুতি সাহা এই জিনোম সিকোয়েন্স নিয়ে কাজ করছেন। এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ আরো কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে এর সিকোয়েন্স করা হয়েছে। আমরা কয়েকটি স্ট্রেন পেয়েছি। একশর বেশী করা গেলে এবং বিভিন্ন বয়সের রোগী, সংক্রমিত রোগীর আক্রান্তের প্রভাব-প্রকৃতি নিয়ে আরো জিনোম করলে বোঝা সম্ভব।
সারা বিশ্বে বা বাংলাদেশে রোগীদের দেখা গেছে যে তাতে এ, বি,সি তিনটি ক্লাডে ভাগ করা যায়। সারা বিশ্বে প্রায় তিন লাখের বেশী । এর লক্ষণ দেখা গেছে জ্বর, কাশি, শ্বাসকষ্ট। মোট কথা আমাদের ইবোলা সিস্টেমকে নষ্ট করে দিয়ে দেহের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যজ্ঞ যেমন হার্ট, লিভার কিডনী সমস্যা সৃষ্টি করছে। অঙ্গ ব্যর্থতার কারণ ঘটাতে পারে। কোন কোন ক্ষেত্রে নিউমোনিয়া, পারমোনা ওডাইমা এবং সাইটোকাইনিস স্ট্রম তৈরী করতে পারে। এর ফলে কার্ডিয়াক ইনজুরি , যে কোন অরগান ফেইলর হতে পারে। কারো কারো হজমের সমস্যা, উচ্চ রক্তচাপ, মাথাব্যথা, পেট ব্যথা হতে পারে। একটা লক্ষণ হতে পারে নাকে ঘ্রাণ পাচ্ছেনা। আমাদের ধারণা এই রোগে ২৫ থেকে ৫০ ভাগ রোগীর ক্ষেত্রে কোন উপসর্গ পাওয়া যায়না। এটা বাংলাদেশসহ গোটা পৃথিবীতে। অবশিষ্টদের ৭৫ থেকে ৫০ ভাগ রোগীর ক্ষেত্রে খুব মাইল্ড উপসর্গ পাওয়া যায়। বাকী যে ১৪ ভাগকে হসপিটালে নিতে হবে। তার মধ্যে ৬ ভাগ রোগী খুব ক্রিটিক্যাল অবস্থায় পাওয়া যায়, এদের ইনটেনসিভ ক্যায়ারে নিতে হচ্ছে। এই হলো আমাদের মূল বিষয়।

৫ . গোলাম সারোয়ার সম্রাট: আপনি তো সরকারি ভাবে ঠাকুরগাঁওয়ে ল্যাব স্থাপনের সম্ভবনা জরিপ করেছেন। করোনা পরীক্ষা ও জেলায় পিসিআর ল্যাব প্রতিষ্ঠা নিয়ে কিছু বলবেন ।

ড. আনোয়ার খসরু পারভেজ:
আপনি জেনে খুশি হবেন জেলার যারা স্বাস্থ্য সেবার সঙ্গে জড়িত সিভিল সার্জনসহ এবং আমাদের ঠাকুরগাঁও ১ আসনের মাননীয় রমেশ চন্দ্র সেন এমপির সঙ্গে আমার সাক্ষাত হয়েছে। আমি তাঁকে এ বিষয়ে ব্রিফ করেছি। তিনি খুবই পজিটিভ, এই ল্যাব প্রতিষ্ঠার বিষয়ে। এছাড়া জেলা প্রশাসক ড. কেএম কামরুজ্জামান এবং পুলিশ সুপার মো. মনিরুজ্জামানসহ জনপ্রশাসনের অন্যান্য কর্মকর্তারা এ বিষয়ে খুবই পজিটিভ। জনগণকে ধন্যবাদ জানাবো সকলের প্রচেষ্টায় এটা হয়তো সম্ভব হবে। তবে ঠাকুরগাঁওয়ে পিসিআর ল্যাব প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের বিষয়। সরকারের চূড়ান্ত সিন্ধান্তের প্রেক্ষিতে প্রয়োজনীয় স্থানে ল্যাব স্থাপন করা হবে। এই জেলায় আমাকে জরিপ করে একটি রিপোর্ট দিতে বলা হয়। আমি রিপোর্ট করেছি।





আন্তর্জাতিক এর আরও খবর

ফুলবাড়িতে বিজিবি-বিএসএফ বৈঠক : সীমান্ত হত্যার কড়া প্রতিবাদ ফুলবাড়িতে বিজিবি-বিএসএফ বৈঠক : সীমান্ত হত্যার কড়া প্রতিবাদ
মাদকদ্রব্যের পাচারবিরোধী আন্তর্জাতিক দিবস উদযাপনে আলোচনা সভা ও পুরস্কার বিতরণী মাদকদ্রব্যের পাচারবিরোধী আন্তর্জাতিক দিবস উদযাপনে আলোচনা সভা ও পুরস্কার বিতরণী
ঠাকুরগাওয়ে নির্যাতিতদের সমর্থনে আন্তর্জাতিক সংহতি দিবস পালিত ঠাকুরগাওয়ে নির্যাতিতদের সমর্থনে আন্তর্জাতিক সংহতি দিবস পালিত
ঠাকুরগাঁওয়ে আন্তর্জাতিক মিডওয়াইফ দিবস পালিত ঠাকুরগাঁওয়ে আন্তর্জাতিক মিডওয়াইফ দিবস পালিত
আন্তর্জাতিক মহান মে দিবস উপলক্ষে ঠাকুরগাঁওয়ে র‌্যালি ও আলোচনা সভা আন্তর্জাতিক মহান মে দিবস উপলক্ষে ঠাকুরগাঁওয়ে র‌্যালি ও আলোচনা সভা
টাঙ্গন নন্দিনী সাহিত্য ও পাঠচক্রের সভা টাঙ্গন নন্দিনী সাহিত্য ও পাঠচক্রের সভা
ইতিহাসবিদ মুনতাসীর মামুনকে সংবর্ধনা ইতিহাসবিদ মুনতাসীর মামুনকে সংবর্ধনা
ঠাকুরগাঁওয়ে ছাত্রলীগ নেতার উদ্যোগে ছিন্নমূল শিশুদের মাঝে খাবার বিতরণ ঠাকুরগাঁওয়ে ছাত্রলীগ নেতার উদ্যোগে ছিন্নমূল শিশুদের মাঝে খাবার বিতরণ
ঠাকুরগাঁওয়ে লকডাউনের চতুর্থ দিনে ইউএনও-পুলিশের অভিযান : অর্থদন্ড ঠাকুরগাঁওয়ে লকডাউনের চতুর্থ দিনে ইউএনও-পুলিশের অভিযান : অর্থদন্ড
ঠাকুরগাঁওয়ে লকডাউনের তৃতীয় দিনে আইন-শৃঙ্খলা : জেল-অর্থদন্ড ঠাকুরগাঁওয়ে লকডাউনের তৃতীয় দিনে আইন-শৃঙ্খলা : জেল-অর্থদন্ড

আর্কাইভ