শিরোনাম:
ঠাকুরগাঁও, বৃহস্পতিবার, ১৭ অক্টোবর ২০২৪, ৩১ আশ্বিন ১৪৩১

Deshayan
বুধবার ● ৬ মে ২০২০
প্রচ্ছদ » উন্নয়ন-সম্ভাবনা » একটি বিশেষ সাক্ষাতকার : কোভিড-১৯ করোনা ভাইরাস : বিশ্ব ও বাংলাদেশ
প্রচ্ছদ » উন্নয়ন-সম্ভাবনা » একটি বিশেষ সাক্ষাতকার : কোভিড-১৯ করোনা ভাইরাস : বিশ্ব ও বাংলাদেশ
১০৩৮ বার পঠিত
বুধবার ● ৬ মে ২০২০
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

একটি বিশেষ সাক্ষাতকার : কোভিড-১৯ করোনা ভাইরাস : বিশ্ব ও বাংলাদেশ

---ড. মো. আনোয়ার খসরু পারভেজ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের অধ্যাপক। প্রেষণে পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্বে রয়েছেন। সংক্রামক অনুজীব নিয়ে গবেষণা তাঁর মূল ক্ষেত্র। কোভিড-১৯ যা করোনা নামে সমধিক পরিচিত, এ অনুজীব নিয়ে তিনি বর্তমানে গবেষণা করছেন। এ ভাইরাসের উত্থান, বিশ্বব্যাপী এর বিস্তার এবং মানুষ থেকে মানুষে এ রোগ থেকে রক্ষা পাওয়ার কৌশল,সংকটজনিত বিষয়ে কথা বলেছেন। সম্প্রতি আলাপ হয়েছে দেশায়ন ডটকমের সম্পাদক গোলাম সারোয়ার সম্রাট এর সঙ্গে।

গোলাম সারোয়ার সম্রাট: করোনার উত্থান, লক্ষণ ও বিস্তার সম্পর্কে কিছু বলবেন ?

ড. মো. আনোয়ার খসরু পারভেজ:
আমরা সকলেই জানি যে, গত বছরের শেষের দিকে চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে অজ্ঞাত জীবাণুর কারণে আশঙ্কাজনক হারে নিউমোনিয়া রোগী পাওয়া যেতে থাকে। পরীক্ষায় এসব রোগীদের দেহে যে জীবাণু পাওয়া যায় তা জিনোম সিকোয়েন্সিং এর মাধ্যমে সার্স-কোভ-২ ভাইরাস হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে এই মহামারি রোগকে কোভিড-১৯ নামে অভিহিত করে। এই ভাইরাসটি পরবর্তী সময়ে বিশ্বের ২১০টি দেশে ছড়িয়ে পড়ে। গত ২৯ এপ্রিল ২০২০ পর্যন্ত এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ২ লাখ ১৮ হাজার ৩৮৬ জন মৃত্যুবরণ করেন। চীনের পর ইউরোপ এবং আমেরিকায় এর ব্যাপক বিস্তার ঘটে। এরপর দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে এর প্রাদুর্ভাব শুরু হয়। তবে চীন, ইউরোপ এবং আমেরিকার তুলনায় দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে তুলনামূলক কম প্রাদুর্ভাব লক্ষণীয়। দক্ষিণ এশিয়া বিশেষত বাংলাদেশে কোভিড-১৯ রোগের প্রাদুর্ভাব পরে শুরু হওয়ায় প্রস্তুতিতে খানিকটা সময়ও পাওয়া যায়। করোনার লক্ষণ সার্স- কোভ-২ দ্বারা সংক্রমিত রোগীদের বেশির ভাগই জ্বর, শুষ্ক কাশি, গলাব্যথা হয়ে থাকে। কিছুক্ষেত্রে এটি গুরুতর নিউমোনিয়া, সেপটিক শক, পালমোনারি ওডাইমা, তীব্র শ্বাসযন্ত্রের সমস্যার সিন্ড্রোম, রক্ত জমাটবাধা এবং অঙ্গ বিকলসহ মারাত্মক অবস্থারও সৃষ্টি করতে পারে। হতে পারে শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা, অঙ্গ ব্যথা, টাইফয়েড, ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ, এন্ডোক্রাইন এবং হজমের সমস্যাও। কোন কোন ক্ষেত্রে পেটেব্যথা, মাথা ঘোরা, অ্যানোফিলিসের বহি:প্রকাশও ঘটতে পারে। প্রধানত সংক্রমন হাঁচি, কাশি (শ্বাসযন্ত্রের মাইক্রোফোঁটা) এবং আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শের মাধ্যমে ঘটে।
ভারতের বিজ্ঞানীরা বলছেন, সেখানে শনাক্তকৃত ৮০ ভাগ কোভিড-১৯ রোগীর কোনো ধরনের উপসর্গ নেই। এ সংখ্যাটা বাংলাদেশে কতো, তা এখনো নির্ণয় সম্ভব হয়নি। এ ভাইরাসে আক্রান্ত অধিকাংশ মানুষের মধ্যেই উপসর্গ দেখা দেয় না। আবার দেখা দিলেও তা স্বল্প মাত্রায়, যা অনেক সময় মানুষ অগ্রাহ্য করে। এরফলে যেটা হচ্ছে তা হলো আক্রান্ত ব্যক্তির কোন লক্ষণ দেখা না যাওয়ায় আক্রান্ত বুঝে- না বুঝে সচরাচর যা করার সবই করছে। এদিক-সেদিক যাচ্ছে, লোকজনের সঙ্গে মিশছে। এবং তার মাধ্যমে অন্য ব্যক্তি সংক্রমিত হচ্ছে। এছাড়াও ফিকাল-ওরাল ট্রান্সমিশন সংক্রামিত রোগীদের প্র¯্রাব এবং মল দ্বারাও অন্য কেউ আক্রান্ত হতে পারেন।

গোলাম সারোয়ার সম্রাট: অন্যতম জনঘনত্বের দেশ হিসেবে বাংলাদেশের কি অবস্থা হতে পারে ?
ড. মো. আনোয়ার খসরু পারভেজ:
বাংলাদেশের জনসংখ্যা সতের কোটিরও বেশি। জনসংখ্যার দিক থেকে বাংলাদেশ পৃথিবীর অষ্টম জনবহুল দেশ। পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার ২.১% বাস করে এই ছোট্ট ভূখন্ডে। বাংলাদেশ আয়তনে পৃথিবীর ৯২তম দেশ। পৃথিবীর মোট স্থলভাগের মাত্র ০.১% ভাগ। বিশ্বের অপরাপর কয়েকটি দেশের সঙ্গে তুলনা করলে আমরা লক্ষ করি রাশিয়া আয়তনের দিক থেকে সবচেয়ে বৃহৎ। পৃথিবীর মোট স্থলভাগের ১১% ভাগ। এই বিশাল রাষ্ট্রটি বাংলাদেশের চেয়ে ১১৫ গুণ বেশি। অথচ রাশিয়ার জনসংখ্যা বাংলাদেশের থেকে কম। প্রথম দশটি জনবহুল দেশের মধ্যে জনসংখ্যার ঘনত্বে আমরা অবিসংবাদিতভাবে শীর্ষে। বাংলাদেশে প্রতি বর্গ কিলোমিটারে ১ হাজার ২৬৫জন বসবাস করে, যা চীন, ভারত থেকেও অনেকগুণ বেশি। জনঘনত্বের এই হার রাশিয়া থেকে ১৪০গুণ বেশি। আমরা যদি রূপক অর্থে বলি তাহলে বলতে পারি রাশিয়ায় একটা ঘরে যদি একজন লোক বাস করে, বাংলাদেশে একই সাইজের সেই ঘরে গড়ে ১৪০জন বাস করে। আমরা স্মরণ করতে পারি যে, বাংলাদেশে কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগী পাওয়ার তথ্য প্রকাশ করে ৭ মার্চ ২০২০ তারিখে। আমরা লক্ষ করছি যে, মার্চ মাসের শেষের দিক পর্যন্ত কোভিড-১৯ রোগী কম পাওয়া গেলেও এপ্রিল মাসে তা দ্রুত বাড়তে থাকে। এর কারণ হলো কোভিড-১৯ এখন সারা দেশে কমিউনিটি ট্রান্সমিশন হয়েছে। বিশ্বের সবচেয়ে জনঘত্বের দেশে কমিউনিটি ট্রান্সমিশন হয়ে গেলে কোভিড-১৯ এর মহামারি যে পরিমাণে হওয়ার কথা, আমাদের সৌভাগ্য সেটা এখনো সেই মাত্রায় দেখা যায়নি। তবে এ আশঙ্কা উড়িয়ে দেয়া যায় না যে, এই মহামারি স্বরূপে দেখা দিবে না।

গোলাম সারোয়ার সম্রাট: কোভিড-১৯ মোকাবেলায় চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে আপনার মতামত ?
ড. মো. আনোয়ার খসরু পারভেজ:

কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা এবং আক্রান্ত রোগীদের মৃত্যুর সংখ্যা কমানোর পাশাপাশি অর্থনৈতিক মন্দা এড়াতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া এখন বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা বলছে, করোনার কারণে চলতি বছরে বাণিজ্য-বিনিময় ১৩ থেকে ২৩ শতাংশ কমে যাবে। ১৯৩০ সালে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিয়েছিল। বর্তমানে করোনা বিশ্বের প্রায় সব দেশে ছড়িয়ে-পড়ায় মহামারি আরও ভয়াবহ ও ইতিহাসের বৃহত্তম অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন। বশ্বি ব্যাংক ও অন্যান্য র্অথনতৈকি সংস্থার মতে বশ্বিে পঞ্চাশ কোটি মানুষ র্অথনতৈকি ভাবে ভয়াবহ বপিদে পরবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে । বাংলাদেশের জন্য এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা আরও জরুরি। করোনা ভাইরাসজনিত সংকটে নাগরিকদের অর্থনৈতিক ও সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। করোনা ভাইরাসটি আমাদের কাছে নতুন এবং আমরা প্রতিনিয়ত এর আচরণ ও বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে জানছি। এই ভাইরাস সম্পর্কে আগাম মন্তব্য করা কঠিন হয়ে যাচ্ছে। কারণ অনেক আগাম মন্তব্যের প্রতিফলন ঘটছে না। ফলে এর শেষ কোথায় তা সঠিকভাবে বলা যাচ্ছে না। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে কারোনা দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন যে, আগামী ছয় মাস পর্যন্ত বাংলাদেশে আনুমানিক দেড় কোটি মানুষকে সরকারি খাদ্য সহায়তার যোগান দিতে হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা (বিশেষত শিল্প ও কৃষি খাতে) অর্থনৈতিক মন্দা মোকাবিলায় ৭২ হাজার ৭৫ কোটি টাকার আর্থিক প্রণোদনা/সহযোগিতার ঘোষণা করেছেন, যা ইতিবাচক। সরকার, প্রশাসন এবং সমাজের বিত্তবান সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে। সবচেয়ে দুর্ভোগে পড়েছে প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষজন। এদের ক্ষুধার কষ্ট দূর করা সবচেয়ে জরুরি। ভূক্তভোগী মাত্রই জানেন যে, শ্বাসকষ্টের তুলনায় ক্ষুধার কষ্ট কম নয়। আশেপাশের গরিব পরিবারটি কোনো সহযোগিতা পেয়েছে কী না, তারা খেতে পারছে কী না, তা আমাদের খোঁজ নিতে হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ বিষয়ে খুব সচেতন। তিনি প্রান্তিক জনগোষ্ঠির জীবন ও জীবিকা দুই বিষয়ে গুরুত্ব দিচ্ছেন। কোভিড-১৯ এর প্রভাবে অর্থনীতি যাতে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেদিকে বেশি নজর দিতে হবে। বাংলাদেশের অর্থনীতি বাঁচাতে নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক অভিজিত ব্যানার্জি ২৩ এপ্রিল অতিরিক্ত নোট ছাপিয়ে তা মানুষের হাতে দেয়ার যে সুপারিশ করেছেন, করোনা সংকটের চলমান ধারাবাহিকতার কোন এক পর্যায়ে আমাদের তাও করতে হতে পারে। সে পরিকল্পনা নিয়ে ভাবতে হবে।

(দ্বিতীয় পর্বে সমাপ্ত)





উন্নয়ন-সম্ভাবনা এর আরও খবর

ঠাকুরগাঁওয়ের চেরাডাঙ্গীতে ফুটবল টুর্নামেন্ট উদ্বোধন ঠাকুরগাঁওয়ের চেরাডাঙ্গীতে ফুটবল টুর্নামেন্ট উদ্বোধন
ঠাকুরগাঁওয়ের বান্দিগড় ধনীপাড়ায় ওয়ান ডে ফুটবল টুর্নামেন্ট ঠাকুরগাঁওয়ের বান্দিগড় ধনীপাড়ায় ওয়ান ডে ফুটবল টুর্নামেন্ট
ঠাকুরগাঁওয়ে ইন্টার স্কুল ফুটবল টুর্নামেন্টের ফাইনাল ঠাকুরগাঁওয়ে ইন্টার স্কুল ফুটবল টুর্নামেন্টের ফাইনাল
ঠাকুরগাঁওয়ে যৌথবাহিনীর অভিযানে চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী গ্রেফতার ঠাকুরগাঁওয়ে যৌথবাহিনীর অভিযানে চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী গ্রেফতার
ঠাকুরগাঁওয়ে নতুন জেলা প্রশাসকের সাথে সংবাদকর্মীদের মতবিনিময় সভা ঠাকুরগাঁওয়ে নতুন জেলা প্রশাসকের সাথে সংবাদকর্মীদের মতবিনিময় সভা
গ্রাম আদালত কার্যক্রম পরিচালনায় স্থানীয় অংশীজনদের সাথে সমন্বয় সভা গ্রাম আদালত কার্যক্রম পরিচালনায় স্থানীয় অংশীজনদের সাথে সমন্বয় সভা
রুহিয়া থানা বিএনপির কাউন্সিল অনুষ্ঠিত-সভাপতি জব্বার : সম্পাদক রিপন রুহিয়া থানা বিএনপির কাউন্সিল অনুষ্ঠিত-সভাপতি জব্বার : সম্পাদক রিপন
ঠাকুরগাঁও জেলা ফুটবল রেফারীজ এসোসিয়েশনের নতুন কমিটি ঠাকুরগাঁও জেলা ফুটবল রেফারীজ এসোসিয়েশনের নতুন কমিটি
গণমাধ্যমের উন্নয়নের লক্ষ্যে ঠাকুরগাঁওয়ে সাংবাদিকদের অংশগ্রহনে মতবিনিময় সভা গণমাধ্যমের উন্নয়নের লক্ষ্যে ঠাকুরগাঁওয়ে সাংবাদিকদের অংশগ্রহনে মতবিনিময় সভা
আগামীর পররাষ্ট্রনীতি হবে ছাত্র-জনতার মতামতের উপর : কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক সারজিস আলম আগামীর পররাষ্ট্রনীতি হবে ছাত্র-জনতার মতামতের উপর : কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক সারজিস আলম

আর্কাইভ