মঙ্গলবার ● ৩ ডিসেম্বর ২০১৯
প্রচ্ছদ » ইতিহাস-ঐতিহ্য » ঠাকুরগাঁও ৪৮তম পাক হানাদার মুক্ত দিবস
ঠাকুরগাঁও ৪৮তম পাক হানাদার মুক্ত দিবস
দেশায়ন ডেস্ক : মঙ্গলবার ৪৮ তম ঠাকুরগাঁও মুক্ত দিবস। দীর্ঘ ৯ মাস যুদ্ধের পর ১৯৭১ সালের ৩ ডিসেম্বর পাকিস্তানি হানাদার মুক্ত হয় ঠাকুরগাঁও। এই দিনে ঠাকুরগাঁওয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের মরণপণ লড়াই আর মুক্তিকামী জনগণের দুর্বার প্রতিরোধের মুখে পতন হয় পাকবাহিনীর।
সেই ধারাবাহিকতায় ৩ ডিসেম্বর মঙ্গলবার পাকিস্তানি হানাদার মুক্ত দিবসের আয়োজন করে জেলা উদীচী ও জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ। ঠাকুরগাঁও প্রেসকাব সামনের চত্বরে সকাল ১১টায় আড়ম্বরপূর্ণ এই অনুষ্ঠানের উদ্বোধক ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও সাবেক পৌর মেয়র আকবর হোসেন এবং শহিদ বুদ্ধিজীবী অধ্যাপক গোলাম মোস্তফার সহধর্মিনী শহিদ জায়া আনোয়ারা মোস্তফা।
এ সময় জেলা উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সভাপতি সেতারা বেগমের সভাপতিত্বে স্বাগত ব্ক্তব্য দেন অনুষ্ঠানের আহবায়ক ফিরোজ আমিন সরকার।
এছাড়া বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন, জেলা প্রশাসক ড. কামরুজ্জামান সেলিম, পুলিশ সুপার মো. মনিরুজ্জামান পিপিএম-সেবা, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মু. সাদেক কুরাইশী, জেলা মুক্তিযোদ্ধার সাবেক কমান্ডার বদরুদ্দোজা বদর, সাবেক সাবেক ডেপটি-কমান্ডার আব্দুল মান্নান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. কাওসার হামিদুল হক, মুক্তিযোদ্ধা অবসরপ্রাপ্ত জাতিসংঘের অফিসার লে. ড. সাইফুল্লাহ সৈয়দ, মুক্তিযোদ্ধা ড. এ কাইয়ুম খান, মো. মোজাম্মেল হক, সাবেক উপজেলা কমান্ডার সুবোধ চন্দ্র রায়, জেলা উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সাধারণ সম্পাদক রেজওয়ানুল হক রিজু। এসময় উপস্থিত ছিলেন উপমহাদেশের প্রখ্যাত লোকসংগীত গবেষক ও গণসংগীত শিল্পী শুভেন্দু মাইতি (ভারত)।
প্রথম অধিবেশনে উদ্বোধনী সংগীত, শোভাযাত্রা, শহিদ বেদী-সমাধিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি এবং যুদ্ধকালীন স্মৃতিচারণ অনুষ্ঠিত হয়।
বিকেলে বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং পরিবারবর্গের সম্মাননা।সন্ধ্যায় উৎসব বজায় রেখে ফানুস ওড়ানো এবং আতশবাজীর আয়োজন ছিল। সন্ধ্যা ৭ টায় ছিল ভারত থেকে আগত শিল্পী শুভেন্দু মাইতি গণসংগীত পরিবেশনা।
পাকস্তানি সেনাদের পতনের পর এ এলাকার সর্বত্রই ছড়িয়ে পড়ে মুক্তির উলাস। আনন্দ উদ্বেলিত কণ্ঠে ‘জয়বাংলা’ ধ্বনি আর হাতে প্রিয় স্বদেশের পতাকা নিয়ে ছুটোছুটি করতে থাকে তরুণ-যুবক সবাই।
যে মানুষগুলোর আত্মত্যাগে দেশ শত্রæমুক্ত হয়েছিল তাদের স্মরণে হানাদার মুক্ত দিবস পালনে এবার জেলা উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী ও জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ দিনব্যাপী কর্মস‚চি নিয়েছে। সেই সব কর্মস‚চির মধ্য দিয়ে পালিত হচ্ছে দিবসটি।
ঠাকুরগাঁও মহকুমা ছিল ৬ নম্বর সেক্টরের অন্তর্ভুক্ত। কমান্ডার ছিলেন পাক বাহিনীর স্কোয়াড্রেন লিডার খাদেমুল বাশার। সমগ্র সেক্টরে ১ হাজার ১২০টির মত গেরিলা বেইস গড়ে তোলা হয়। ৮ মে’র আগ পর্যন্ত সুবেদার কাজিম উদ্দিনের দায়িত্বে ছিলেন। ৯ মে ক্যাপ্টেন নজরুল, কাজিম উদ্দিনের কাছ থেকে দায়িত্ব বুঝে নেন। জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে স্কোয়াড্রেন সদরু উদ্দিন ও ১৭ জুলাই ক্যাপ্টেন শাহারিয়া সাব-সেক্টরের দায়িত্ব নেন। তবে এ জেলায় জনসাধারণের মধ্যে থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠিত করেন, সাবেক জেলা গভর্নর প্রয়াত ফজলুল করিম, সাবেক পৌর মেয়র বর্তমানে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক আকবর হোসেন প্রমুখ।
৩০ নভেম্বর পর্যন্ত উলেখযোগ্য যুদ্ধ হয় বালিয়াডাঙ্গী, পীরগঞ্জ, রাণীশংকৈল ও হরিপুর থানা অঞ্চলে। ২৯ নভেম্বর এ মহকুমার পঞ্চগড় থানা প্রথম শত্রু মুক্ত হয়। এরপর পাকবাহিনীর মনোবল ভেঙে যায়। তারা প্রবেশ করে ঠাকুরগাঁওয়ে।
৩০ নভেম্বর পাকসেনারা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ভুলী ব্রিজ উড়িয়ে দেয়। তারা সালন্দর এলাকায় সব জায়গায় বিশেষ করে ইু খামারে মাইন পুতে রাখে। মিত্রবাহিনী ভুলী ব্রিজ সংস্কার করে ট্যাংক পারাপারের ব্যবস্থা করে।
পহেলা ডিসেম্বর কমান্ডার মাহাবুব আলমের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা ঠাকুরগাঁওয়ে ঢুকে। ২ ডিসেম্বর রাতে ঠাকুরগাঁওয়ে প্রচন্ড গোলাগুলি হয়। ওই রাতেই শত্রু বাহিনী ঠাকুরগাঁও থেকে পিছু হঁটে ২৫ মাইলে অবস্থান নেয়। পরে ৩ ডিসেম্বর বিজয়ের বেশে ঠাকুরগাঁওয়ে ঢুকে মুক্তিযোদ্ধারা। এসময় স্বদেশের পতাকা উড়িয়ে ‘জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু’ ধ্বনিতে আনন্দ উলাস করে এলাকার মুক্তিকামী মানুষ।