শিরোনাম:
ঠাকুরগাঁও, বৃহস্পতিবার, ১৭ অক্টোবর ২০২৪, ৩১ আশ্বিন ১৪৩১

Deshayan
বৃহস্পতিবার ● ১০ অক্টোবর ২০১৯
প্রচ্ছদ » ঠাকুরগাঁও » অপরাধীর বাবা-মা’ পরিচয়ে বেঁচে থাকার কষ্ট : আফরোজা রিকা
প্রচ্ছদ » ঠাকুরগাঁও » অপরাধীর বাবা-মা’ পরিচয়ে বেঁচে থাকার কষ্ট : আফরোজা রিকা
৭৮২ বার পঠিত
বৃহস্পতিবার ● ১০ অক্টোবর ২০১৯
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

অপরাধীর বাবা-মা’ পরিচয়ে বেঁচে থাকার কষ্ট : আফরোজা রিকা

---সাহিত্য বিভাগ, দেশায়ন : আবরার হত্যাকাণ্ডে যে নির্মমতা দেখেছি তাতে শরীরের লোম শিউরে ওঠে। আবরারের মা-বাবার যেমন অসংখ্য স্বপ্ন ছিল ছেলেকে ঘিরে তেমনি যে ছেলেরা এই হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে তাদের মা-বাবার স্বপ্ন কেমন ছিল সন্তানের জন্য। আলাদা কি? অবশ্যই নয়। তাঁরাও স্বপ্ন দেখেছেন তাঁদের সন্তান বড় হবে, খ্যাতিমান হবে। সংসারের হাল ধরবে। তবে প্রত্যেকের এই স্বপ্ন দেখার মধ্যে আপাত পার্থক্য না থাকলেও দৃষ্টিভঙ্গির পার্থক্য রয়েছে। সেই তারতম্যই কি এই অপকর্মের পেছনে দায়ী নয় ? এখানে মা- বাবা তাঁদের সন্তানকে দক্ষ ইঞ্জিনিয়ার করতে চেয়েছেন, সেই লক্ষ্য’র দিকেই ঠেলে দিয়েছেন, মানুষ হতে শেখান নি। মানুষ করতে ব্যর্থ না হলে আজকের এই দিনটি দেখতে হতো না। শুনেছি একজন নারী পরিপূর্ণ সুন্দর হয়ে ওঠে যেদিন সে মা হয়। মা তো সেদিনই হয় যেদিন গর্ভে ভ্রূণের অস্তিত্ব টের পায়। তারপর চলে যত্নের জন্য কষ্ট। কতখানি, কত কত পরিমাণ কষ্ট করতে হয় তার ফিরিস্তি দিব না, কারণ সব মা ই জানেন। এবং বাবা সেসবের সাক্ষী।

তিনি আগলে রাখেন তাঁর সন্তানের মাকে। জন্মানোর পর দিনের পর দিন পেরোনো, রাতের পর রাত জাগা, লালন পালনের ব্যাখ্যা দিলে পুস্তক হয়ে যাবে। যা সব বাবা মা ই জানেন। চলে বড় হওয়ার জন্য অপেক্ষার পালা। দিন যায়, মাস যায়, বছর যায়। একেক বেলা ফুসলিয়ে খাওয়ানোর ঝামেলা পেরুতে গেলে মনে হয় একমাস সামলাতে হয়েছে। সান্ত্বনা, দিনগুলো পার হোক, বড় হোক। এমন অসংখ্য বেলা রয়েছে, যা দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর। এভাবে বছর যুগ পেরিয়ে গেলে শিশুটি কিশোর থেকে তরুণ, তরুণ থেকে যুবকে পরিণত হয়। ক্যালেন্ডারে দাগ কাটতে গিয়ে সালটার দিকে চোখ পড়ে। বুকটা ধড়মড়িয়ে ওঠে। এত্ত এত্ত বছরের সোনালি দিনগুলো জীবন থেকে খসে গেছে, টেরই পাননি মা, যা আর ফেরত যোগ্য নয়। এতদিন শুধু সন্তানের যত্নে মনোযোগ দিয়েছেন মা, নিজের চাওয়া পাওয়ার দিকেতো খেয়ালই রাখেন নি? নিজের খুশি, ভালোলাগার কথা ভাবাই হয়নি। অথচ বয়স বেড়ে দ্বিগুণ। কেমন বিষন্নতায় ছেয়ে যায় মন। বেশিক্ষণ নয়। মমতাময়ী মা, সন্তানের মা, মাগো ডাকটিতে উবে যায় তার সমস্ত দুঃখ, বেদনা, না পাওয়া।

ভাবে এই তো আমার স্বপ্ন বড় হচ্ছে….! এই তো জীবনের সেরা উপহার। যাদের ঘিরে সমস্ত ভালোলাগা ঘূর্ণায়মান। এই সন্তানদেরকে কষ্টে রেখে নিজের সুখের কথা ভাবতে পারেন না যাঁরা, তাঁরাই তো মা-বাবা। সৃষ্টিকর্তার কাছে একটাই চাওয়া থাকে তা হলো তাঁদের সন্তান স্বাবলম্বী না হওয়া পর্যন্ত যেন তাঁদের মৃত্যু না হয়। আবরারের মা - বাবাও তেমনি দুজন মানুষ। তাঁদের নিরিবিলি শান্ত পড়ুয়া ছেলেটি একদিন স্বাবলম্বী হবে। কিন্তু কী নির্মম পরিহাস! আরও কিছু বাবা - মায়ের সন্তানেরা হায়েনার মত ক্ষিপ্ত হয়ে তাঁদের আদরের সন্তানটিকে পিটিয়ে হত্যা করেছে। কিন্তু কেন? কিসের এত পৈশাচিকতা? কিসের অভাব ছিল তাদের জ্ঞানার্জনে? কেউ কেউ বলছেন এটা জেনেটিক স্বভাব। বিজ্ঞান কি তাই বলে? আমার মাথায় ঢোকে না। নাকি এই উশৃঙ্খল ছেলেদের বাবা মা নৈতিক শিক্ষা, মানবিক মানুষ হওয়ার শিক্ষা থেকে বঞ্চিত করেছেন? সন্তানদের তাদের দাবি কি একটাই ছিল ‘ ইঞ্জিনিয়ার হও, চকচকে সার্টিফিকেট আন, টাকা রোজগারের মেশিন হও শুধু।

হ্যাঁ আমাদের সমাজে অধিকাংশ পিতামাতাই এই ভুল পথেই পরিচালিত করেন সন্তানদের। কখনোই বলেন না, মানবিক হও, মনুষ্যত্বের অধিকারী হও আগে তারপর সার্টিফিকেট। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার বাইরেও যে জানবার, শিখবার অনেককিছু আছে সে সবের অবসর কি মা বাবা তাদের দিয়েছেন? করেছেন শিল্পের প্রতি, সংস্কৃতির প্রতি আগ্রহী? যা তাদের মানবিক করতো। এখনাকার মা বাবা তো মানছেনই না যে, তাদের সন্তানকে সৃজনশীল করতে হবে, শৈল্পিক করতে হবে। তারপর বড় বড় সার্টিফিকেট। যে সন্তানটির মননশীল, রুচিসম্মত মেধা আছে সে তো পড়ালেখাতেও পারদর্শী হবে নিশ্চিত। কেন আমরা কেবল সার্টিফিকেটমুখী করছি সন্তানদের? কেন যান্ত্রিক মানুষরূপে পরিণত করছি ? কেন শিল্প সাহিত্যের প্রতি আগ্রহী করে তুলছি না ? আর বিদ্যানিকেতন গুলো ? শিল্পকলার সমস্ত প্রশংসা ছুঁড়ে ফেলে ‘ জিপিএ পেয়েছিস ? ‘।

অথচ পাঠ্যপুস্তকেও লিখা আছে পড় এবং পড়। হাসপাতালের পাশাপাশি লাইব্রেরির গুরুত্বের কথা বলা হয়েছে। যা একজন শিক্ষার্থীর মানসিক চিকিৎসা দিয়ে মানবিক করে তোলে। কিন্তু বিদ্যানিকেতন কি তা মানছে। খুব হাসি পায় যখন সেখানে খেলাধূলা প্রতিযোগিতার পুরস্কার হিসেবে সিরামিক কংক্রিটের ক্রোকারিজ উপহার দেয়া হয়। তবু শামসুর, হুমায়ুন, ইলিয়াস, রবি, নজরুল, জীবনান্দ, বঙ্গবন্ধু, মুনিরচোধুরী দেয়া হয় না। যদিও বা দেয়া হয় কিছু বই সেগুলোও ভ্রান্ত হাদিসের বই। আর এইসব বই নির্বাচনের দায়িত্ব দেয়া হয় এমন সব শিক্ষককে যাঁদের শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি সম্পর্কে কোন ধারণাই নেই। আজকে আবরার কে নিষ্ঠুরভাবে মৃত্যুবরণ করতে হয়েছে যে মানবিকতার অভাবে সেই একই মানবিকতার অভাব আমাদের সন্তানদের মাঝে তৈরি করছি অভিভাবক এবং বিদ্যানিকেতন মিলেই। তাহলে কি আরও অসংখ্য অমানবিক অপরাধী, কেবল সার্টিফিকেটধারী যন্ত্র তৈরি হচ্ছে না আমাদের অজান্তেই? পরিশেষে বলব, সন্তানদের প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত করতে হবে।

সৃজনশীল হওয়ার অবসর দিতে হবে। মননশীল করে গড়ে তুলতে হবে। অসংখ্য বই পড়াতে হবে। তবেই তারা কেবল মানুষ নয় দেশের যোগ্য নাগরিক, প্রকৃত দেশপ্রেমিক হতে পারবে। তা না হলে আবরারের মত কারুর হত্যাকারী বা ধর্ষকের মা-বাবা হয়ে বেঁচে থাকার কষ্ট বহন করতে হবে।

আফরোজা রিকা,

সভাপতি, নারী মুক্তি সংসদ,

ঠাকুরগাঁও সম্পাদক, বোধন।





ঠাকুরগাঁও এর আরও খবর

ঠাকুরগাঁওয়ের চেরাডাঙ্গীতে ফুটবল টুর্নামেন্ট উদ্বোধন ঠাকুরগাঁওয়ের চেরাডাঙ্গীতে ফুটবল টুর্নামেন্ট উদ্বোধন
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার ৯ ইউপি চেয়ারম্যান কার্যালয়ে অনুপস্থিত ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার ৯ ইউপি চেয়ারম্যান কার্যালয়ে অনুপস্থিত
ঠাকুরগাঁওয়ের বান্দিগড় ধনীপাড়ায় ওয়ান ডে ফুটবল টুর্নামেন্ট ঠাকুরগাঁওয়ের বান্দিগড় ধনীপাড়ায় ওয়ান ডে ফুটবল টুর্নামেন্ট
ঠাকুরগাঁওয়ে ইন্টার স্কুল ফুটবল টুর্নামেন্টের ফাইনাল ঠাকুরগাঁওয়ে ইন্টার স্কুল ফুটবল টুর্নামেন্টের ফাইনাল
ঠাকুরগাঁওয়ে প্রয়াত দলিল লেখকের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা প্রদান ঠাকুরগাঁওয়ে প্রয়াত দলিল লেখকের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা প্রদান
ঠাকুরগাঁওয়ে যুবদলের প্রয়াত নেতৃবৃন্দের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা ও দোয়া ঠাকুরগাঁওয়ে যুবদলের প্রয়াত নেতৃবৃন্দের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা ও দোয়া
ঠাকুরগাঁওয়ে যৌথবাহিনীর অভিযানে চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী গ্রেফতার ঠাকুরগাঁওয়ে যৌথবাহিনীর অভিযানে চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী গ্রেফতার
ঠাকুরগাঁওয়ে নতুন জেলা প্রশাসকের সাথে সংবাদকর্মীদের মতবিনিময় সভা ঠাকুরগাঁওয়ে নতুন জেলা প্রশাসকের সাথে সংবাদকর্মীদের মতবিনিময় সভা
ঠাকুরগাঁওয়ে ২ দিনে বজ্রপাতে নিহত-৩ : আহত-৩ ঠাকুরগাঁওয়ে ২ দিনে বজ্রপাতে নিহত-৩ : আহত-৩
গ্রাম আদালত কার্যক্রম পরিচালনায় স্থানীয় অংশীজনদের সাথে সমন্বয় সভা গ্রাম আদালত কার্যক্রম পরিচালনায় স্থানীয় অংশীজনদের সাথে সমন্বয় সভা

আর্কাইভ