মঙ্গলবার ● ১৩ আগস্ট ২০২৪
প্রচ্ছদ » উন্নয়ন-সম্ভাবনা » সংখ্যালঘুদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে আ’লীগ গুজব ছড়িয়ে আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশের ভাবমুর্তি নষ্ট করতে চায় : মির্জা ফখরুল
সংখ্যালঘুদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে আ’লীগ গুজব ছড়িয়ে আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশের ভাবমুর্তি নষ্ট করতে চায় : মির্জা ফখরুল
দেশায়ন ডেস্ক : বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, শেখ হাসিনা ভারতের দিল্লিতে বসে নতুন চক্রান্তে লিপ্ত হয়েছে। যখন তারা মানুষের সামনে দাড়াতে পারে না তখন আমাদের হিন্দু ভাইদেরকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করতে চায়। এটা তাদের অপচেষ্টা, কৌশল, খেলা। যখন তারা সমস্ত খেলায় পরাজিত হবে, নির্বাচনে হেরে যাবে, তখন তারা বলবে হিন্দু ভাইদের উপর নির্যাতন করা হয়েছে। আপনারা জানেন বাংলাদেশে হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান একটি গাছে ফুলের মত ফুটে রয়েছে। আমাদের এ সম্পর্কের মধ্যে তারা ফাটল ধরাতে চায়। আওয়ামীলীগ এগুলো ছড়িয়ে দিয়ে আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশের ভাবমুর্তি নষ্ট করতে চায়। আমাদের কথা খুব পরিস্কার, রাজনৈতিক যথন কোন পট পরিবর্তন হয়, তখন একটা গলযোগ হয়, সেই গন্ডগোলটা কখনও ধর্মীয় নয়, সেটা রাজনৈতিক। আমরা সব সময় হিন্দু ভাইদের ভোট পেয়েছি, তাহলে আমরা তাদের কেন আলাদা ভাববো।
তিনি মঙ্গলবার সদর উপজেলার গড়েয়া ডিগ্রী কলেজ মাঠে “ঐক্য ও সম্প্রীতি সমাবেশে” প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপরোক্ত কথা বলেন।
তিনি বলেন, আপনারা জানেন প্রায় ১৫ বছর আমরা একটা সৈরাচারী, ফ্যাসিস্ট, ভয়াবহ নির্যতনকারী শাসক গোষ্ঠীর দ্বারা নির্যাতিত, নীপিড়িত। আমাদের প্রায় ৭শ নেতা কর্মী গুম হয়েছে। প্রায় হাজার খানিক নেতাকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। ৬০ লাখ নেতা কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হয়েছে। অন্যান্য ইউনিয়নগুলোর মত এই ইউনিয়নের হাজারও নেতা কর্মী মামলা খেয়েছেন। গণ গ্রেফতার করে এই সরকার ১৫ বছর কাটিয়েছে। প্রায় ২৭ হাজার নেতা কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এত নির্যাতনের পরেও আপনারা কখনও হাল ছেড়ে দেননি। এবারও আমাদের ছাত্ররা, আমাদের সন্তানেরা যখন আন্দোলন শুরু করলো তখন সরকার প্রায় ৬ জনকে হত্যা করেছে। পুলিশ যখন নিরিহ ছেলেদের গুলি চালালো তখন শিক্ষার্থীরা গর্জে উঠলো। সান্ধ আইন চালু করা হলো। কিন্তু তাকে অগ্রাহ্য করে হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নামলো। অসংখ্য ছেলে যখন মারা গেল তখন তাদের বাবা-মারাও রাস্তায় নেমে আসলো। ঠাকুরগাঁওয়ে ৪ আগস্ট হাজারও নেতা কর্মী বড় মাঠে একত্র হয়ে আন্দোলন করেছেন।
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, এসবের মধ্যে একটি ঘটনা চোখে পরেছে, অবিশ্বাস্য। যেটা হলো লক্ষ লক্ষ মানুষ, ছেলে, মেয়ে, শিশু, বৃদ্ধ সকলে রাস্তায় নেমে বুক পেতে দিয়ে বলেছে, গুলি কর আমরা রাস্তা ছেরে যাবো না। আপনাদের রংপুরের সাঈদের কথা মনে আছে, মুগ্ধর কথা মনে আছে নিশ্চয়। এই ভয়াবহ দানবীয় সরকারের পুলিশ তাদের গুলি করে মারলো। যেভাবে অত্যাচার নির্যাতন চালিয়েছে আমাদের সাধারণ মানুষজনের উপরে সেটা ভাষায় বর্ণনা করা যাবে না। তাই পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছে হাসিনা। ৫ তারিখে দুপুরে দেশ ছেড়ে পালিয়েছে। তার দোসরেরা পালিয়েছে, অনেকে পালাতে পারে নাই। পালিয়েও লাভ হবে না। আমরা বলেছিলাম, কোনদিকে পালাবে তুমি, কোন দিকে পথ নাই। উত্তরে পর্বতমালা, দক্ষিণে বঙ্গপোসাগর কোন পালাবার পথ নাই। আওয়ামীলীগের ওই অবস্থা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আল্লাহকে অস্বীকার করে জনগণের উপর যে অত্যাচার করেছে, আমাদের উপর অত্যাচার করেছে, আলেম ওলামাদের ফাসি পর্যন্ত দিয়েছে। বিএনপির নেতা কর্মীদের দিনের পর দিন কারাগারে রেখেছে, আমিও কারাগারে ছিলাম অনেকদিন। তার পরেও শেষ রক্ষা হয়নাই, পালিয়ে যেতে হয়েছে এবং দেশ ছেড়ে পালাতে হয়েছে। এখন আশ্রয় নিয়েছে দিল্লিতে। ব্রিটেন অস্বীকার করেছে, অ্যামেরিকা বলেছে নিবে না। এখন পর্যন্ত ভারতও অফিসিয়ালি আশ্রয় দিতে রাজি হয়নি, এখন পর্যন্ত তিনি সেখানে আছেন। যখন মানুষের পিঠ দেয়ালে ঠেকে যায়, তখন আর মানুুষ থেমে থাকে না। হাসিনা সরকার ৯১ হাজার কোটি টাকা পাচার করেছে, ব্যাংক থেকে প্রায় ৯৩ হাজার কোটি টাকা নাই। এই টাকাগুলো তারা বিদেশে পাচার করেছে, আর কিছু টাকা বাংলাদেশে নৈরাজ্য সৃষ্টি করার কাজে ব্যবহার করছে। আমি ধন্যবাদ জানাতে চাই দেশ রক্ষায় ছাত্র ভাইদেরকে, যারা এদেশকে রক্ষা করেছে। সেই সাথে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানাতে চাই বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে। যারা প্রয়োজনের মধ্যে জনগণের পাশে এসে দাড়ায়।
সদর উপজেলা বিএনপির আয়োজনে শান্তি ও সম্প্রীতি সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মির্জা ফয়সল আমীন, সহ সভাপতি ওবায়দুল্লাহ মাসুদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পয়গাম আলী, পৌর বিএনপির সভাপতি মো: শরিফুল ইসলাম শরিফ, সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব হোসেন তুহিন, মহিলা দলের সভাপতি ফোরাতুন নাহার প্যারিস, জেলা ছাত্রদলের সভাপতি মো: কায়েস, স্বেচ্ছাসেবকদলের সাধারণ সম্পাদক মো: সোহেল রানা, গড়েয়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি রেদওয়ানুল হক রেদো শাহ সহ বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি মো: আব্দুল হামিদ।
এর পর বিকেলে তিনি রুহিয়া উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে ঐক্য ও সম্প্রীতি সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন। পরে আন্দোলনে নিহত ৪ নেতার পরিবারের সাথে সাক্ষাত করেন মির্জা ফখরুল।