বিদ্যালয়ে ভর্তির দাবিতে অনশনরত ঠাকুরগাঁওয়ের দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শরীফ

দেশায়ন ডেস্ক : অন্ধত্বই শরীফের জন্য বড় অভিশাপ হলো! একদিকে প্রতিবন্ধী জীবন, অন্যদিকে অনিশ্চিত ভবিষ্যত। তাই শিক্ষা ছাড়া জীবনে বেঁচে থাকাটা অর্থহীন মনে হয় শরীফের কাছে। করোনায় দীর্ঘদিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের প্রায় দেড়বছর পর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার সিদ্ধান্তে স্বস্তি ফিরেছে শিক্ষার্থীদের মধ্যে। কিন্তু চিন্তার শেষ নেই ঠাকুরগাঁওয়ের প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী শরীফের। দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী হওয়ায় মাধ্যমিকের কোন বিদ্যালয়েই ভর্তির সুযোগ পাচ্ছেনা সে। তাহলে কি দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শরীফের শিক্ষা-জীবন কি এখানেই শেষ? চোখে আলো না থাকায় সমস্ত পৃথিবীই অন্ধকারাচ্ছন্ন ঠাকুরগাঁওয়ের মুন্সিরহাট মাদ্রাসা পাড়ার দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী শরীফ আলীর কাছে। শেষ পর্যস্ত কোন উপায়ন্তর না থাকায় বিদ্যালয়ে লেখা-পড়া এবং ভর্তির দাবি শরীফ অনশনরত।

ঠাকুরগাঁওয়ের দরিদ্র পরিবারের সন্তান শরীফ। ছোটবেলায় মাত্র তিনবছর বয়সে অজ্ঞাত রোগে চোখের জ্যোতি হারিয়ে যায় তার। অনেক কষ্টে তার মা বাবা চিকিৎসা করান। কিন্তু প্রয়োজনীয় টাকার অভাবে উন্নত চিকিৎসা করাতে পারছেনা তার পরিবার। শরীফ জানায়, দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীরা পরিবার ও সমাজের বোঝা। কিন্তু সে বোঝা হয়ে থাকতে চায়না। তাই পঞ্চম শ্রেণি থেকে উত্তীর্ণ হওয়ার পর ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তির জন্য প্রথমে স্থানীয় সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় ও পরবর্তীতে সমাজ সেবা কার্যালয় ও জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে বহুবার যোগাযোগ করেছে সে ও তার পরিবার। কিন্তু এরই মধ্যে প্রায় আট মাস অতিবাহিত হয়ে গেছে। কালক্ষেপণ করে সকলেই তাকে আশ্বাস দিলেও কেউই তার ভর্তির বিষয়ে গুরুত্ব দিচ্ছেন না।
তাই বাধ্য হয়ে গতকাল রবিবার থেকে নিজ বাড়িতেই (পূর্ণদিবস) অনশনের পথ বেছে নিয়েছে।
উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে দেশ ও দশের সেবা করবে সে। তাই স্কুলে ভর্তির বিষয়ে মাননীয় প্রধান মন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রীর সুদৃষ্টি ও সহযোগিতা কামনা করেছে সে।
এদিকে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী সন্তানের ভবিষ্যত ও সুচিকিৎসা নিয়ে দুশ্চিন্তায় দিন পার করছেন দরিদ্র পিতা মাতা। চিন্তিত শরীফের প্রতিবেশিরাও।
শরীফের বাবা রমজান আলী অভিযোগ করে বলেন, নতুন ডিসি আসার আগে বিগত পুরোনো ডিসি ড.কামরুজ্জামান সেলিম নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করেই চলতি বছরের জুলাই মাসে গোপনে ঠাকুরগাঁও সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় ও সরকারি বিভিন্ন স্কুলে অর্ধশত শিক্ষার্থী ভর্তি করিয়েছেন। অথচ দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের ভর্তীর কোটা ও নিয়ম থাকলেও তা মানা হচ্ছেনা। তার দৃষ্টি প্রতিবন্ধী সন্তানের শিক্ষার ক্ষেত্রে কারো সহযোগিতা পাচ্ছেন না তিনি।
শরীফের মা শফুরা বেগম জানান, তার মৃত্যুর পর শরীফ অসহায় হয়ে পরবে। কেউই তার পাশে থাকবে না। তাই লেখাপড়া জানা থাকলে ভবিষ্যতে আর যাই হোক শরীফকে ভিক্ষা করে চলতে হবে না। তাই সন্তানের স্কুলে ভর্তির বিষয়ে উপযুক্ত কর্তৃপক্ষর কাছে সুদৃষ্টি ও সহযোগিতা কামনা করেন।
জেলা সমাজ সেবা অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো.আল মামুন জানান, জেলা সমাজ সেবা কার্যালয়ের অধীনে সমন্বিত দৃষ্টি প্রতিবন্ধী হোস্টেলে শরীফ ভর্তি রয়েছে। করোনায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় হোস্টেল বন্ধ রয়েছে। শিক্ষক ও জনবল সংকটের কারণে শিক্ষা কার্যক্রম কিছুটা বিঘিœত হচ্ছে। তবে শরীফের ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তির বিষয়ে চেষ্টা চলছে।
ঠাকুরগাঁও সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পিযুষ কান্ত রায় জানান, সমাজ সেবা অধিদপ্তরের মাধ্যমে তার বিদ্যালয়ে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের শিক্ষার সুযোগ থাকলেও এর জন্য নির্দিষ্ট শিক্ষক ও উপকরণ সুবিধা নেই। বিদ্যালয়ে যে চারজন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী ভর্তি রয়েছে তাদেরও শিক্ষার ক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। শরীফের ভতির্র বিষয়ে জেলা প্রশাসক ও শিক্ষা অধিদপ্তরের নির্দেশ পেলে ব্যাবস্থা গ্রহণ করা হবে।
জেলা শিক্ষা অফিসার খন্দকার মো. আলাউদ্দীন আল আজাদ জানান, ঠাকুরগাঁওয়ে যে দুটি সরকারি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে তার সভাপতি জেলা প্রশাসক। ভর্তির বিষয়ে জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করার পরামর্শ দেন তিনি।
সরকারি তথ্যানুযায়ী ঠাকুরগাঁও জেলায় মোট ১ হাজার ৬শত ৬৮ জন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী রয়েছে। সংশ্লিষ্ট শিক্ষক ও প্রয়োজনীয় শিক্ষা উপকরণ এবং নিদ্দিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠান না থাকায় অধিকাংশ শিক্ষার্থীই শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত।