শুক্রবার ● ৭ ডিসেম্বর ২০১৮
প্রচ্ছদ » আন্তর্জাতিক » ঠাকুরগাঁও সীমান্তে স্বজনদের টানে মিলনমেলা
ঠাকুরগাঁও সীমান্তে স্বজনদের টানে মিলনমেলা
গোলাম সারোয়ার সম্রাট : ঠাকুরগাঁও সীঁমান্তের ঘের দেয়া কাঁটাতারের বেড়া আটকাতে পারেনি দুই বাংলার হাজার-হাজার প্রাণের স্বজনের আত্মার মিলনকে। আজ শুক্রবার ঠাকুরগাঁও জেলার কোঁচল ও চাঁপাসার এবং ভারতের নাড়গাঁও ও মাকারহাট সীমান্তের তাঁরকাটার এপার-ওপার মিলে আট থেকে দশ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে দুই বাংলার হাজার-হাজার মানুষ সমবেত হয়েছে। রক্তের টানে আত্মীয়তার বন্ধনে বহু মানুষ এই মিলন মেলায় এসেছে।
বর্ষ পুঞ্জিকা অনুযায়ী হিন্দু স¤প্রদায় প্রতি বছর শ্রী-শ্রী জামর কালির জিউ (পাথরকালী) পূজা উপলক্ষে মেলার আয়োজন করা হয়। আর এই সমাবেশকে ঘিরে অনুষ্ঠিত হয় এক অঘোষিত মেলা। প্রতি বছর এই দিনে দূরদূড়ান্ত থেকে দু-দেশের স্বজনরা ভিড় জমায় ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুর উপজেলা চাপাসার ও রানীশংকৈল উপজেলার কোচল সীমান্তের ৩৪৫ ও ৩৪৬ নম্বর পিলার এলাকায়। এবারও শুক্রবার সকাল থেকে দূরদূড়ান্ত থেকে দু-দেশের আত্মীয়-স্বজনরা সীমান্তে সমবেত হতে থাকে। স্বজনদের সাথে একটু দেখা ও কথা বলার জন্য সকাল থেকে সীঁমান্তের এপার-ওপারে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে দেখা যায় দু-দেশের হাজার হাজার মানুষকে।
আর শেষ পর্যন্ত দুপুর ১২ টায় স্বজনদের ধরে রাখতে পারেনি দু-দেশের সীমান্ত রা বাহিনী। তাঁরকাটার গেট না খুললেও অনানুষ্ঠানিকভাবেই তাঁরকাটার এপারে-ওপারে দাঁড়িয়ে খুব কাছ থেকে স্বজনদের সাক্ষাৎ ও কথা হয় একে অপরের সঙ্গে। আদান-প্রদান হয় নানা রকমের খাদ্য ও পণ্য সামগ্রী। স্বজনদের সাথে দেখা করতে আসা সৈয়দপুর উপজেলার বাসিন্দা মরিয়ম বেগম (৫০) জানান, এবার দেখা করেছেন তার ছোট বোন সেফালীর সঙ্গে।
১৬ বছর আগে সেফালীর বিয়ে হয় ভারতের মাল্দা জেলার চানমুনী গ্রামে। বিয়ের পর এই প্রথম বোন ও বোনের স্বামীর দেখা পেয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। পরে তার বোন ও বোনের ছেলে-মেয়ে ও স্বামীকে কাপড় এবং মিষ্টি দিয়ে বেশ আনন্দ ভোগ করেন। ভারতের স্বজনদের সঙ্গে দেখা করতে আসা দিনাজপুর জেলার কাহারোল উপজেলার প্রতীমা রাণী (৬০) জানান, ২০ বছর পুর্বে আমার ছোট মেয়ে কমলারাণীর বিয়ে হয় ভারতের গোয়ালপুকুর থানার পাঁচঘরিয়া গ্রামে। বিয়ের পর আর কথা হয়নি তার সাথে। কিন্তু আজ মেয়ের সাথে তাঁরকাটার এপার-ওপারে দাড়িয়ে কথা বলে এবং কাটাতাঁরের ফাঁক দিয়ে মিষ্টি ও কাপড়-চোপড় দিতে পেড়ে মনে বড় আনন্দ পেয়েছি।
মিলন মেলায় ঘুরতে আসা অনেকেই তাদের আত্মীয়-স্বজনদের সাথে দেখা করেন এবং কথা বলেন ও জিনিস পত্র আদান-প্রদান করেন। তবে দু-দেশের রক্ষী বাহিনীর উর্ধতন কতৃপক্ষের অনুমতি না থাকায় বিজিবি ও বিএসএফ’র ছিলো করা প্রহরা।
কিন্তু শেষ পর্যন্ত দুদেশের নিরাপত্তার দায়িত্বের থাকা বিজিবি ও বিএসএফ ধরে রাখতে পারেনি লাখো মানুষের ঢল। হরিপুর থানার অফিসার ইনচার্জ আমিরুজ্জামান বলেন, কড়া প্রহরা সত্বেও অনেকে তাঁরকাটার এপার-ওপারে দাড়িয়ে বিভিন্ন স্থানে কথা বলেছেন ও খাদ্য বিনিময় করেছেন।
এব্যাপারে শ্রী-শ্রী জামর কালির জিউ (পাথরকালী) পূজা কমিটির সভাপতি নগেন কুমার পাল বলেন, বিজিবি ও বিএসএফ’র পক্ষ থেকে সীমান্তে কঠোর নজরদারী থাকা সত্বেও অন্য বছরের তুলনায় এবার দু-দেশের স্বজনরা সহজেই তাঁরকাটার এপার-ওপারে দাড়িয়ে কথা বলেছেন ও খাদ্য বিনিময় করেছেন।